মন্দির

মসজিদকে পাশে নিয়ে হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

ভারতের একটি বিখ্যাত মন্দির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারণসীতে গঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ে এই মন্দির অবস্থিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভগবান শিবের বারোটি পবিত্রতম মন্দিরের একটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দির।

এই মন্দিরের দেবতা শিব ‘বিশ্বনাথ বা ‘বিশ্বেশ্বর’ নামে পূজিত হন। বারাণসী শহরের অপর নাম ‘কাশী’। কাশী শব্দটি এসেছে কাশ থেকে। যার প্রকৃত অর্থ জ্বলজ্বল করা। এ কারণে এই মন্দিরটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দিরের সুউচ্চ চূড়াটি ১৫.৫ মিটার উঁচু, যা সোনায় মোড়ানো। এজন্য মন্দিরটিকে স্বর্ণ মন্দির নামেও অভিহিত করা হয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন কতজন দানব ও রাক্ষসকে বধ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ

অতীতে অসংখ্যবার এই মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের সাথেই একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদের জায়গাতেই আদি মন্দিরটি ছিল।

হিন্দু পুরাণেও এই মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্দ পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। শৈব সাহিত্য থেকে জানা যায়, সতীদেবীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন। মণিকর্ণিকা ঘাট শৈবদের পবিত্র তীর্থস্থান।

একাদশ শতাব্দীতে হরিচন্দ্র মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। তবে ১১৯৪ সালে মুসলিম যোদ্ধা মোহাম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্য সকল মন্দিরের সাথে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করেন। এরপর মন্দিরটি পুণরায় নির্মিত হলেও মুসলিম শাসক কুতুবউদ্দিন আইবক আবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন। আইবকের মৃত্যুর পর মন্দিরটি আবার নির্মিত হয়। ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক আবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন।

সম্রাট আকবরের রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল ১৫৮৫ সালে আবার মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তবে ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুণরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে, সেই স্থানে জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমান মন্দিরের পাশে মসজিদটি আজও রয়েছে। রানী অহল্যা বাঈ হোলকর ১৭৮০ সালে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি এক হাজার কেজি স্বর্ণ দিয়ে মুড়ে দেন। ১৯৮৩ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছে।

কাশী ভ্রমণ
দূরে দেখা যাচ্ছে সাদা রঙের জ্ঞানবাপী মসজিদ

আরো পড়ুনঃ কলিযুগের শেষেই কি সর্বনাশ! কী অপেক্ষা করছে মর্ত্যবাসীর জন্য?

অনেকগুলো ছোট ছোট মন্দির নিয়ে এই মন্দির চত্বর গঠিত। গঙ্গা সংলগ্ন বিশ্বনাথ গলি নামে পরিচিত একটি গলিতে এই মন্দিরগুলো অবস্থিত। প্রধান মন্দিরে রুপোর বেদিতে ৬০ সে.মি উঁচু ও ৯০ সে.মি পরিধির একটি শিবলিঙ্গ স্থাপিত। মন্দির চত্বরে জ্ঞানবাপী নামে একটি ছোট কূপ রয়েছে। কথিত আছে, একবার মুসলিম আক্রমণের সময় মন্দিরের পুরোহিত জ্যোতির্লিঙ্গটি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, সেটি নিয়ে এই কূপে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

বিশ্বনাথ মন্দির
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির হিন্দুদের কাছে অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান। রামকৃষ্ণ পরমহংস, আদি শঙ্করাচার্য, স্বামী বিবেকানন্দ, তুলসীদাস গোস্বামী, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, গুরু নানক সহ অসংখ্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এই মন্দিরে এসেছিলেন। হিন্দু বিশ্বাস মতে, গঙ্গায় ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ হয়।

আরো পড়ুনঃ ভারতের এই দুর্গা মন্দিরে পুরুষ ভক্তদের নারীবেশে পুজো দিতে হয়

বিশ্বাস কর হয়, স্বয়ং মহাদেব এই শহরের অভিভাবক এবং রক্ষাকর্তা। বিশ্বনাথ মন্দিরের মাথায় একটি সোনার ছত্র আছে। ভক্তদের বিশ্বাস‚ এই ছত্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু প্রার্থনা করলে তা পূর্ণ হয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন। কাশী বিশ্বনাথ দর্শন। কাশী। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দেখাও। কাশী ভ্রমণ। গয়া কাশী বৃন্দাবন। কাশী বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ মন্দির। বিশ্বনাথ দর্শন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!