আচার ও সংস্কারএকাদশীএকাদশীএকাদশী মাহাত্ম্যব্রত ও উপবাস

বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য জানলে আপনিও পালন করতে বাধ্য হবেন!

বিজয়া একাদশী | বিজয়া একাদশী ২০২২ । বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য | বিজয়া একাদশী কি | বিজয়া একাদশী পালনের নিয়ম | বিজয়া একাদশী 2022 | বিজয়া একাদশী কবে । বিজয়া একাদশী ২০২২ কবে । বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য জানলে আপনিও পালন করবেন!

বিজয়া একাদশী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একাদশী ব্রত। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে বিজয়া একাদশী বলে। বিজয়া একাদশী ব্রত পালন করলে এই জগতে জয় লাভ ও পরকালে অক্ষয় সুখ লাভ হয়। বিজয়া একাদশী ব্রত কথা শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়। সনাতন পন্ডিতের আজকের আয়োজন থেকে চলুন জেনে নিই বিজয়া একাদশী ব্রত কথা ও বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য

বিজয়া একাদশী ২০২২
বিজয়া একাদশী ২০২২ সময়সূচি

বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য

স্কন্দপুরাণে বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,হে বাসুদেব! অনুগ্রহ করে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী মাহাত্ম্য আমাকে বলুন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে যুধিষ্ঠির, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে বিজয়া একাদশী বলে। এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভু ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। ব্রহ্মা তখন বলেন, এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে, তাই একাদশীর নাম বিজয়া।

অতি পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র সীতা ও লক্ষ্মণকে সাথে নিয়ে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন। স্ত্রী ও ছোট ভ্রাতার সাথে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন। লঙ্কাপতি রাবণ তখন সীতা দেবীকে অপহরণ করেন। সীতার খোঁজে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমণ করতে থাকেন। এমনই এক সময় মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর দেখা হয়। জটায়ু সীতাহরণের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সমস্ত ঘটনা রামচন্দ্রকে অবহিত করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

সীতাকে উদ্ধারে দৃঢ় সংকল্প রাম এরপর বানররাজ সুগ্রীবের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। ভগবান রামচন্দ্রের আশীর্বাদ ধন্য হনুমান লঙ্কায় গমন করেন। সেখানে অশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরামচন্দ্র প্রদত্ত অঙ্গুরীয় তাঁকে অর্পণ করেন। লঙ্কা থেকে ফিরে হনুমান শ্রীরামচন্দ্রের নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। হনুমানের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে রামচন্দ্র সুগ্রীবের সাথে পরামর্শ করে সমুদ্রতীরে উপস্থিত হন। দূরন্ত সমুদ্র দেখে তিনি কনিষ্ট ভ্রাতা লক্ষ্মণকে বলেন, হে লক্ষ্মণ, এই অগাধ সমুদ্র কীভাবে পার হওয়া যায়, তাঁর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।

আরো পড়ুনঃ ভৈমী একাদশীর মাহাত্ম্য ও ব্রত কথা

প্রত্যুত্তরে লক্ষ্মণ বললেন, হে পুরুষোত্তম, সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি! আপনাকে আমি কী উপদেশ দেব? তবে বকদালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বসবাস করেন। এখান থেকে চার মাইল দূরে তাঁর আশ্রম। হে রাঘব! আপনি সেই ঋষি শ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন।

লক্ষ্মণের কথা শুনে তাঁরা সেই মহামুনির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। রামচন্দ্র সেই মুনিকে প্রণাম করলেন। মুনিবর শ্রীরামচন্দ্রকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন, হে রামচন্দ্র, আপনি কী কারণে আমার নিকট এসেছেন, কৃপা করে তা আমাকে বলুন।

শ্রীরামচন্দ্র বললেন, হে মুনিবর, আপনার কৃপায় আমি সৈন্যসহ এই সমুদ্রতীরে উপস্থিত হয়েছি। রাক্ষসরাজ রাবণের লঙ্কা বিজয় করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এই ভয়ংকর সমুদ্র কীভাবে পার হতে পারি, তাঁর উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি।

মুনিবর প্রসন্ন চিত্তে রামচন্দ্রকে বললেন, হে রাম আপনার অভিষ্ট সিদ্ধির জন্য যে ব্রত করণীয় তা আমি আপনাকে বলছি। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের বিজয়া নামক একাদশী পালনে আপনি অবশ্যই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন। এই ব্রতের বিধি শ্রবণ করুন। বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সোনা, রূপা, তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে, সুগন্ধি চন্দনে সাজিয়ে তাঁর উপর স্বর্ণের নারায়ণ মূর্তি স্থাপন করবেন। উক্ত একাদশীর দিন   প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালাচন্দন পরিয়ে নারকেল ও গুবাক দিয়ে পূজা করবেন। অতঃপর তুলসী, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ-দীপ নৈবেদ্য দিয়ে ভক্তি সহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সারাদিন যাপন করবেন। রাত্রি জাগরণ করে অখন্ড ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখবেন।

আরো পড়ুনঃ 2020 হিন্দু ক্যালেন্ডার: সকল হিন্দু উৎসবের তারিখ ও সময়সূচী

পরদিন অর্থাৎ দ্বাদশীর দিন সূর্যোদয়ের পর কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পর সেই কলস বিসর্জন করবেন। তারপর ঐ মূর্তি কোন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দান করবেন। এই ব্রতের পূণ্য প্রভাবে আপনার জয় লাভ হবে।

ব্রহ্মা বললেন, হে নারদ! ঋষির কথামতো ব্রত পালনের ফলে রামচন্দ্র বিজয়ী হয়েছিলেন। লঙ্কাজয়, রাবণবধ ও সীতা উদ্ধারের মাধ্যমে জগতে তিনি অতুলনীয় কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি নিয়ম মেনে যে লোক এই একাদশী ব্রত পালন করবে, তাঁর এ জগতে জয়লাভ ও পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে যুধিষ্ঠির, এ কারণ বিজয়া একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য। এই ব্রতকথা শ্রবণ কীর্তনে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

আরো পড়ুনঃ ৫১ শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান এবং কোথায় সতীর কোন অঙ্গ পড়েছিল জেনে নিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!