দেশে দেশে হিন্দুধর্ম

দক্ষিণ কোরিয়ায় হিন্দু ধর্ম

বৌদ্ধ ধর্মের হাত ধরে কোরীয় সমাজে হিন্দু ধর্মের খানিকটা প্রভাব রয়েছে।

উত্তর-পুর্ব এশিয়ার একটি উন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়ার প্রাচীন ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। সাংবিধানিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। অতীতে বৌদ্ধ প্রধান দেশ হলেও, ১৮ ও ১৯ শতকের দিকে এসে খ্রিস্টান ধর্ম এই দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশকে প্রভাবিত করেছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোরীয় জনগোষ্ঠী খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে এই হার কমতে শুরু করে।

২০১৫ সালের জন শুমারির ফল অনুসারে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার ৫৬.৯% অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশী মানুষ নিজেদের কোনও ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছিলেন। ২০১২ সালের এক সমীক্ষায় ৫২% দক্ষিণ কোরীয় জানিয়েছিলেন তাঁরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন এবং ৩১% মানুষ বলেছিলেন তাঁরা ধর্মীয় নয়। ১৫% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

যারা ধর্ম মেনে চলেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ খ্রীস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মানুসারী। ২০১৫ সালের জনশুমারির তথ্য মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ২৭.৬% খ্রিস্টান এবং ১৫.৫% বৌদ্ধ ধর্মানুসারী। খুবই অল্প সংখ্যক কোরীয় নাগরিক কনফুসীয় ধর্ম, ওন বৌদ্ধ মতবাদ, ছন-দো মতবাদ, দেসান জিনরি-হো মতবাদ মেনে চলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় হিন্দু ধর্মানুসারীদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজারের মতো হিন্দু দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাস করছেন। এরা মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজের তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। তবে বৌদ্ধ ধর্মের হাত ধরে কোরীয় সমাজে হিন্দু ধর্মের খানিকটা প্রভাব রয়েছে। দক্ষিণ কোরীয় বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে চারজন স্বর্গীয় রাজার দেখা পাওয়া যায়, যা হিন্দু ধর্মের অষ্ট-দিকপালের অনুরূপ। এছাড়া বর্তমানে কিছু হিন্দু সংস্কৃতি যেমন যোগ ও বেদান্ত দর্শন দক্ষিণ কোরীয় তরুণদের আকর্ষণ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়াতে ইসকনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলো সিউল মেট্রোপলিটন সিটি ও গিয়ঙ্গি প্রদেশে অবস্থিত। সিউলের মন্দিরগুলো হলো, শ্রী রাধা শ্যামসুন্দর মন্দির, শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির এবং হিমালয়ান মেডিটেশন এন্ড ইয়োগা সাধনা মন্দির। গিয়ঙ্গি প্রদেশের মন্দিরের নাম শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দির।

দক্ষিণ কোরিয়ার হিন্দু জনসংখ্যা
দক্ষিণ কোরিয়ার ইসকন ভক্ত

শ্রী রাধা শ্যামসুন্দর মন্দির প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট দর্শন সময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রতি রবিবার মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্পেশাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। প্রোগ্রামগুলো হলো, ভারতীয় ভজন, যোগ, হিন্দি ভাষা শিক্ষা ও ভগবত গীতা পাঠ। এই মন্দিরে রয়েছে বৈদিক কালচারাল কেন্দ্র। এই মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ও দিওয়ালী সহ সকল হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত একটি হিন্দু সংগঠন হলো হিমালয়ান মেডিটেশন এন্ড ইয়োগা সাধনা মন্দির। এর প্রধান কার্যালয় সিউলে হলেও, সমগ্র দক্ষিণ কোরিয়া জুড়েই এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দু যোগ ও বেদান্ত দর্শন দক্ষিণ কোরীয় তরুণদের আকর্ষণ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার হিন্দুদের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!