Videosদেশে দেশে হিন্দুধর্ম

ফিজিতে হিন্দু ধর্ম যেভাবে অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে স্থান করে নিল!

ফিজি হিন্দু! দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে ক্ষুদ্র একটি দেশের নাম ফিজি। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখায় অবস্থিত এই দেশটি তিনশোর বেশি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে। তার বেশির ভাগ দ্বীপই এখনো অনাবাদি এবং আয়তনেও খুবই ক্ষুদ্র। দুটি দ্বীপ বেশ বড়। ফিজির বেশির ভাগ শহর এ দুটি দ্বীপে অবস্থিত। সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম হলো ভিতি। রাজধানী সুভা এই দ্বীপেই অবস্থিত। দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপের নাম ভেনিয়া। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে যারা এই ফিজির দ্বীপগুলোতে বসবাস করছে, তাদের ‘কাভেতি’ বলা হয়। প্রচলিত আছে-তারা আফ্রিকার টাঙানেকা থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছিল। টাঙানেকাই বর্তমান কেনিয়া। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, তারা মূলত ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত। তবে তাদের অবয়বে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশীয় ছাপ বিদ্যমান।

ফিজি ধর্ম
ফিজির আদিবাসী জনগোষ্ঠী

২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১৮২৭৪ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দেশের জনসংখ্যা প্রায় নয় লাখ তিন হাজার দুইশত সাতজন। এর মধ্যে ৫৬.৮ শতাংশ ফিজিয়ান বংশোদ্ভূত এবং ৩৭.৫ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এই দেশের জনসংখ্যার ৬৪.৪ শতাংশ খ্রীষ্টান এবং ৩৭.৫ শতাংশ সনাতন হিন্দু ধর্মানুসারী। এছাড়া অল্প সংখ্যক ইসলাম ধর্মানুসারীও ফিজিতে বসবাস করেন।

আরো পড়ুনঃ কানাডায় হিন্দু ধর্মের প্রভাবশালী অবস্থান যেভাবে তৈরী হলো!

১৮ শতকে ইংরেজদের মাধ্যমেই ফিজিতে ভারতীয় হিন্দুদের প্রবেশ ঘটে। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা যখন ফিজিতে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে, তখন লক্ষ করে যে এখানকার আদিবাসীরা চাষাবাদে একেবারে অজ্ঞ-অনভিজ্ঞ। ইংরেজ গভর্নর তখন চিন্তা করল- ভারতীয় অভিজ্ঞ চাষীদের এখানে নিয়ে এলে ভালো হবে। ভারতও তখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ। যেই ভাবনা সেই কাজ। মাদ্রাজ, কেরালা, বাঙ্গাল ও উত্তরপ্রদেশের অসংখ্য দরিদ্র কৃষকদের, অল্প পরিশ্রমে বেশি উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত ফিজিতে। অতঃপর তাদের মাথায় পরানো হয় দাসত্বের শিকল। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তাদের এ দাসত্বের রাত কেটে সম্ভাবনার সূর্য উঁকি দিয়েছে। যা দেখে ভারতীয় অঞ্চল থেকে আরো বহু মানুষ সেখানে ছুটে গেছে- জীবিকার তাগিদে। এভাবেই ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা হয়ে উঠেছে ফিজির ২য় বৃহত্তম জাতি গোষ্ঠী।

বর্তমানে ফিজিতে বসবাসরত হিন্দুরা উচ্চতর সামাজিক অবস্থানে রয়েছেন। ফিজির বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হিন্দু ধর্মের লোকেরা। প্রায় ৫০০০ হিন্দু ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়।

ফিজি দেশ কেমন
ফিজির হিন্দু ধর্মানুসারী মানুষ

ফিজিয়ান হিন্দুরা যেসব ধর্মীয় উৎসব পালন করেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রামনবমী, হোলি এবং দিওয়ালী। একসময় হোলি, ফিজির হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও বর্তমানে দিওয়ালী প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এদিনটি ফিজিতে সরকারী ছুটির দিন।

আরো পড়ুনঃ আমেরিকায় হিন্দু ধর্মের এতো শক্তিশালী অবস্থানের প্রকৃত কারণ কী?

ভারতীয় হিন্দুদের আগমনের পর থেকেই প্রার্থনার জন্য ফিজিতে মন্দির গড়ে উঠেছে। ফিজির অধিকাংশ মন্দির উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠেছে। ১৯১০ সালে নির্মিত শিউ হিন্দু মন্দির এর প্রকৃত উদাহরণ। ফিজির নাদিতে অবস্থিত শ্রী শিব সুব্রমাণিয়া হিন্দু মন্দির ফিজির বৃহত্তম মন্দির। এছাড়া ফিজির হিন্দু মন্দিরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, মাউনিভাতু সনাতন ধরম রাম মন্দির, নাগ মন্দির, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, শ্রী রাজ মহা মারিয়াম্মান মন্দির, সনাতন ধরম বিষ্ণু মন্দির, ইসকন হরেকৃষ্ণ মন্দির, শ্রী ভেঙ্কাটেশ পারমাল মারিয়াম্মান মন্দির প্রভৃতি। মন্দিরের পাশাপাশি হিন্দুরা এখানে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ফিজির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

ফিজির হিন্দু মন্দির
ফিজির বৃহত্তম মন্দির শ্রী শিব সুব্রমাণিয়া মন্দির

১৯৭০ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার সময় ফিজির প্রায় ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু কম সন্তান উৎপাদন মনস্কতা এবং আরো উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমানোর কারণে বর্তমানে হিন্দু সংখ্যা ৩৭.৫ শতাংশ নেমে এসেছে।

ফিজি হিন্দু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিও দেখতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!