পৌরানিক কাহিনীমহাভারত

কর্ণ দ্রৌপদী কি একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন?

মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র কর্ণ। তিনি রূপে, গুণে, বুদ্ধিতে ও অস্ত্রবিদ্যায় অনেকের চেয়ে বেশী শক্তিশালী। একলব্যের পর মহাভারতের সেরা ধনুর্বিদ ছিলেন কর্ণ। কিন্তু সূতপুত্র হওয়ার অপরাধে জীবনে বারবার তাঁকে হোঁচট খেতে হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছেন রাজ অস্ত্রশিক্ষার অধিকার থেকে। দ্রোপদীর স্বয়ম্ভর সভায় মাছের চোখ বিদ্ধ করে দ্রোপদীকে জয় করার অন্যতম দাবীদার ছিলেন কর্ণ। কিন্তু দ্রোপদীকে বোঝানো হয়েছিলে কর্ণ নিচু জাতের। তাই স্বয়ম্ভর সভায় দ্রোপদী কর্ণকে প্রত্যাখান করেন।

দ্রোপদীর স্বয়ম্ভর সভা
দ্রোপদীর স্বয়ম্ভর সভা

এই অপমান মনে রেখেছিলেন কর্ণ। দুর্যোধনের রাজসভায় পাশা খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে পাণ্ডবরা যখন নতমস্তক, তখন দ্রোপদীকে প্রকাশ্যে বেশ্যা বলে অভিহিত করেন কর্ণ।

কর্ণের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ভ্রুশালী। তিনি ছিলেন দুর্যোধনের সারথির ভগ্নি। পালক পিতা অধিরথের ইচ্ছানুসারে ভ্রুশালীকে বিয়ে করেছিলেন কর্ণ। কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কর্ণের মৃত্যুর পর তাঁর সঙ্গে সহমরণে যান ভ্রুশালী।

আরো পড়ুনঃ শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন অশ্বত্থামা, ঘুরে বেড়ান ভারতের নর্মদা নদীর তীরে

কর্ণের দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বহু মতভেদ আছে। মহাভারত থেকে জানা যায় কর্ণের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সুপ্রিয়া। তিনি ছিলেন দুর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতির সখী। কর্ণের নয় পুত্রের মধ্যে সুপ্রিয়ার গর্ভে জন্ম নেন বৃষষেণ ও সুষেণ।

তামিল সাহিত্য থেকে জানা যায়, কর্ণের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম পোন্নারউভি। আবার কোনও কোনও কিংবদন্তি অনুযায়ী‚ কর্ণের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ঊর্বী। রাজপরিবারের কন্যা ঊর্বীর মা ছিলেন পাণ্ডব মাতা কুন্তীর সখী। কুন্তী ঊর্বীকে অর্জুনের জন্য পছন্দ করেছিলেন। পরিবারেরও সম্মতি ছিল তাতে। কিন্তু সবার মতকে অগ্রাহ্য করে ঊর্বী বিয়ে করেন কর্ণকে। দ্রোপদীর স্বয়ম্ভর সভায় উপস্থিত ছিলেন ঊর্বী। সেখানে সুদর্শন কর্ণকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ঊর্বী। তাই সূতপুত্র জেনেও তিনি কর্ণকে বিয়ে করেছিলেন।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায় কর্ণ এবং দ্রোপদীর মধ্যে পরষ্পরের প্রতি আসলেই কি কোন দুর্বলতা ছিল? দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। বাসুকীর হাতে লাঞ্চিত হওয়ার মুহূর্তে দ্রোপদীর সম্মান রক্ষা করেন কর্ণ। এছাড়া যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভীমকে বধ করেননি। সেটা কী কুন্তীর জন্যই? কেননা বস্ত্রহরণের পর দ্রোপদী পণ করেছিলেন, ভীম যতদিন না দুঃশাসনকে বধ করবেন, ততদিন তিনি চুল বাঁধবেন না। দুঃশাসনের রক্ত মাখার পরেই তিনি চুল বাঁধবেন।

আরো পড়ুনঃ অজ্ঞাতবাসের সময় পাকিস্তানের এই শিব মন্দিরেই নাকি আত্মগোপন করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব

দ্রোপদীর বস্ত্রহরণ
দ্রোপদীর বস্ত্রহরণ

বাসুকীর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কর্ণকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান দ্রোপদী। নিজ স্বয়ম্ভর সভায় করা অপমানের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। অপরদিকে কর্ণও দ্রোপদীকে দেবী সম্বোধন করে রাজসভায় বেশ্যা বলার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এছাড়া দ্রোপদী যখন কৃষ্ণের কাছে জানতে পেরেছিলেন কর্ণ আসলে কুন্তীর জ্যৈষ্ঠ পুত্র, তখন তিনি অনুতাপ করেছিলেন। কর্ণের প্রতি দ্রোপদীর শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যায়, যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সুযোগ পেয়েও তিনি ভীমকে বধ করেননি।

নিজের কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও মহাভারতের যে দুটি চরিত্র সবচেয়ে বেশী হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তারা হলেন দ্রোপদী ও কর্ণ। হয়তো অদৃষ্টের চাওয়াই ছিল এটা, যাতে এদের ঘিরে আবর্তিত হতে পারে মহাকাব্যিক নাটকীয়তা।

আরো পড়ুনঃ কেন কুন্তীসহ সমগ্র নারী জাতিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠির?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!