Featuredআচার ও সংস্কার

পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি ২০২২ কবে? মকর সংক্রান্তি কেন পালন করা হয়?

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মকর সংক্রান্তি বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালিত হয়।

পৌষ সংক্রান্তি ২০২২ কবে?

পৌষ সংক্রান্তি ২০২২ পালিত হবে আগামী ২৯ পৌষ ১৪২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার।

পৌষ সংক্রান্তি কী?

পৌষ সংক্রান্তি আবহমান বাংলার এক প্রাচীন সংস্কৃতি। পৌষ সংক্রান্তিকে মকর সংক্রান্তি নামেও ডাকা হয়। বাংলা সনের পৌষ মাসের শেষ দিন এই সংক্রান্তি পালন করা হয়। দিনটিতে বাঙালিরা বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। পিঠা বানানো ও খাওয়া এবং ঘুড়ি উড়ানো এর মধ্যে অন্যতম।

মকর সংক্রান্তির দিন সূর্য নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।

মকর সংক্রান্তি কবে?

২০২২ সালের মকর সংক্রান্তি পালিত হবে আগামী ২৯ পৌষ ১৪২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার।

মকর সংক্রান্তি কেন পালন করা হয়
মকর সংক্রান্তি কেন পালন করা হয়?

পশ্চিমবঙ্গে মকর সংক্রান্তি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মূলত নতুন ফসলের উৎসব হিসেবে মকর সংক্রান্তি বা পৌষসংক্রান্তি পালিত হয়। বাংলার ঘরে ঘরে হিন্দু ধর্মানুসারীরা নতুন ধান, খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে নানা ধরণের পিঠা তৈরী করেন। এছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতিতে মকর সংক্রান্তি ‘উত্তরায়ণের সূচনা’ হিসেবেও পরিচিত। দিনটিকে অশুভ ও খারাপ সময়ের বিদায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্গত সাগরদ্বীপে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পূণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় ভারতবর্ষসহ দেশ-বিদেশের প্রচুর দর্শণার্থীর সমাগম ঘটে।

বাংলাদেশে মকর সংক্রান্তি

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশেও সংক্রান্তি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি ‘সাকরাইন’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশেও মকর সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে পিঠা-পুলির তৈরী করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌষমেলার আয়োজন হয়। একই সাথে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাউল গানের আসর বসে।

পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে পুরাণ ঢাকায় ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। ঘুড়ি উৎসব বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উৎসব। সেই মুঘল আমল থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। পুরাণ ঢাকার অধিবাসীরা বিশেষ আগ্রহ সহকারে দিনটি পালন করে। এদিন ঘুড়ি উড়ানোর জন্য তারা আগে থেকে ঘুড়ি বানিয়ে এবং সুতায় মাঞ্জা দিয়ে প্রস্তুতি নেয়।

ঘুড়ি উৎসব
মকর সংক্রান্তি বা সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি

ভারতবর্ষের পশ্চিম ও উত্তরের রাজ্যগুলোতে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মকর সংক্রান্তি পালিত হয়। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও মকর সংক্রান্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই সনাতন ধর্মে দিনটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

এদিন পশ্চিম ভারতের গুজরাটে বিশাল পরিসরে পালিত হয়। মানুষ, সূর্য দেবতার কাছে নিজেদের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়কে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পালন করে ঘুড়ি উৎসব। যা মূলত প্রিয় দেবতার কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি রূপক বা প্রতীক হিসেবে কাজ করে। গ্রামগঞ্জে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়।

এই দিনটিতে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেও উদযাপিত হয়। গুড় দিয়ে তৈরী তিলের লাড্ডু এই উৎসবের অন্যতম প্রধান খাবার। মহারাষ্ট্রে একে বলা হয় ‘তিলগুল’। কর্ণাটকে বলা হয় ‘ইল্লু বিল্লা’। দক্ষিণ ভারতে এদিন পোঙ্গল উৎসব পালিত হয়।

দেশে দেশে মকর সংক্রান্তি

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মকর সংক্রান্তি বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালিত হয়। নেপালে এই দিনটি ‘মাঘি’, থাইল্যান্ডে ‘সংক্রান’, লাওসে ‘পি মা লাও’, মায়ানমারে ‘থিং ইয়ান’ এবং কম্বোডিয়ায় ‘মহাসংক্রান’ নামে উদযাপিত হয়। দেশভেদে নামের ভিন্নতার পাশাপাশি উৎসব পালনের ধরণেও রয়েছে ভিন্নতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!