মন্দির

সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ১০ হিন্দু মন্দির

সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ১০ হিন্দু মন্দির

ভারতবর্ষের বাইরে বিশ্বের আর যে সব স্থানে হিন্দু ধর্মের প্রভাব ও অস্তিত্ব রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিঙ্গাপুর। এই সিঙ্গাপুরে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক সনাতন ধর্মানুসারীর বসবাস।

আমাদের আজকের আয়োজনে আমরা জানবো সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ১০টি হিন্দু মন্দিরের নানা অজানা তথ্য।

চলুন তবে শুরু করা যাক-

sri mariamman temple singapore
Sri Mariamman Temple Singapore

০১. Sri Mariamman Temple

১৮২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের প্রাচীনতম হিন্দু মন্দির। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বিভিন্ন ঘটনা ও বিভিন্ন দেব-দেবীর জটিল নকশা সজ্জিত উঁচু গুপুরাম বিশিষ্ট এই মন্দিরটি দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।

দেবী মারিয়াম্মানকে উতসর্গ করে নির্মিত এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের হিন্দুদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চায়না টাউনে অবস্থিত এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে সিঙ্গাপুর সরকার এই মন্দিরটিকে ন্যাশনাল মনুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৮২৭ সালে নরেন্দ্র পিল্লাই নামক এক তামিল হিন্দু কাঠ এবং এক প্রকার পাম ট্রি দিয়ে ছোট একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। একই বছর তিনি মন্দিরে শ্রী মারিয়াম্মানের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করে সিঙ্গাপুর সরকারের কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘হিন্দু এনডোমেন্টস্‌ বোর্ড’।

sri sivan temple singapore
Sri Sivan Temple Singapore

০২. Sri Sivan Temple

ভগবান শিবের উদ্দেশ্য উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের অন্যতম প্রধান হিন্দু মন্দির। মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের পতং পাসিরে অবস্থিত। বর্তমান স্থানে স্থাপিত হওয়ার আগে মন্দিরটি তিনবার স্থানান্তরিত হয়েছিল।

অষ্টভূজাকৃতির কারুকার্যময় এই মন্দিরটি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরী করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে বসবাসরত হিন্দুদের কাছে এই মন্দিরটি অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত। বিদেশী পর্যটকদের কাছেও এই মন্দির অত্যন্ত জনপ্রিয়।

১৮৯৮ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। মন্দিরটি নির্মাণে সিঙ্গাপুরের অনেক হিন্দু অনুদান দিলেও, ভি নাগাপ্পা চেট্টি এবং তার স্ত্রী একটা বড় এমাউন্ট অনুদান প্রদান করেছিলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই মন্দিরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে সিঙ্গাপুর সরকারের অনুদানে মন্দিরটি সংস্কার করা হয়।

প্রতি বছর শিবরাত্রিতে এই মন্দিরে বিশাল আয়োজন করা হয়ে থাকে। তখন ভক্তদের আগমণে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে।

sri veeramakaliamman temple singapore
Sri Veeramakaliamman Temple Singapore

০৩. Sri Veeramakaliamman Temple

এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত লিটল ইন্ডিয়ায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। ১৮৮১ সালে নির্মিত এই মন্দিরটি মা কালীকে উতসর্গ করা হয়েছে। মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতীয় তামিল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত।

Sri Srinivasa Perumal Temple

০৪. Sri Srinivasa Perumal Temple

সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ প্রান্তের লিটল ইন্ডিয়ায় অবস্থিত এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের পুরাতন মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই মন্দিরে কারুকার্যময় সুউচ্চ একটি গোপুরাম রয়েছে। ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উতসর্গীকৃত এই মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।

মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে ভগবান বিষ্ণু, তার সঙ্গী লক্ষ্মী ও আন্দাল এবং তার বাহন গরুড়ের মূর্তি। এই মন্দির সংলগ্ন একটি জলাধার রয়েছে। মন্দিরে প্রবেশের আগে এখানে নিজেকে পরিচ্ছ্বন্ন করতে হয়।

সিঙ্গাপুরে দেবতা মুরুগান অর্থাৎ কার্তিককে কেন্দ্র করে উদযাপিত তামিল উৎসব থাইপুসাম এর মূল কেন্দ্র এই মন্দির। থাইপুসামকে কেন্দ্র করে সিঙ্গাপুরে বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় ভক্তরা বিভিন্ন সাজে নিজেকে সজ্জিত করে থাকে।

Shree Lakshmi Narayan Temple Singapore
Shree Lakshmi Narayan Temple

০৫. Shree Lakshmi Narayan Temple

সিঙ্গাপুরে উত্তর ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নির্মিত একমাত্র মন্দির ‘শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। ১৯৬০ সালের আগ অবধি উত্তর ভারতীয় হিন্দুদের কোন মন্দির ছিলনা সিঙ্গাপুরে। ১৯৬০ সালে বেশ কয়েক উত্তর ভারতীয় হিন্দু ব্যক্তির যৌথ প্রয়াসে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ২৪ এপ্রিল মন্দিরটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়।

ধর্মীয় উপাসনা ছাড়াও এই মন্দিরটি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের হিন্দুদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। দীপাবলী উৎসবের সময় এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

০৬. Arulmigu Velmurugan Gnana Muneeswarar Temple

সিঙ্গাপুরে হিন্দু মন্দিরগুলোর মধ্যে এই মন্দিরটি তুলনামূলক নতুন। ২০০৬ সালে এই মন্দিরটি ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরী এই মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা বিনয়গর, মুরুগান, মুনেশওয়ার। এই তিন দেবতার সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো এখানে বেশ বড় পরিসরে পালিত হয়।

সিঙ্গাপুরে আগত পর্যটকদের নিকট এই মন্দিরটি বেশ জনপ্রিয়। এই মন্দিরের দেয়াল, স্তম্ভ এবং সিলিংগুলো ভীষণ কারুকার্যময়।

০৭. Sri Krishnan Temple

এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের অন্যতম প্রাচীন হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরটি ১৮৭০ সালে নির্মাণ করা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা। সিঙ্গাপুরের ওয়াটার লু স্ট্রীটে এই মন্দিরের অবস্থান।

মন্দিরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৭০ সালে সালেহনুমান ভীম সিং নামে একজন ব্যক্তি, ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থল ওয়াটারলু স্ট্রিটের একটি বট গাছের নিচে শ্রী কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। এই মন্দির এ অঞ্চলে বসবাসকারী হিন্দুদের কেন্দ্রীয় মন্দির।

এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরে বসবাসরত জনগণের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি অনন্য উদাহরণ। কারণ প্রায় কাছাকাছি ‘কাওয়ান ইম থং হুড চো টেম্পল’ থেকে অনেক চীনা ভক্ত প্রায়ই ধূপ জ্বালাতে এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে এখানে আসেন।

০৮. Holy Tree Sri Balasubramaniar Temple

১৯৬২ সালে পোঙ্গল উৎসবের সময় ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি ডকইয়ার্ডের একজন কর্মী পি কারুপিয়া স্বপ্নে লর্ড মুরুগান ও রাজানাগম নামক স্বর্পকে দেখতে পান। তিনি দেখেন, ক্যানবেরা রোডের পশ্চিমে ম্যানগ্রোভ এরিয়ায় একটি এল্যান্থামারন গাছের নিচে লর্ড মুরুগান এবং রাজানাগম বসে আছেন।

দৈব স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে পি কারুপিয়া ঐ গাছের অনুসন্ধানে গিয়ে দেখলেন ছয় প্রধান শাখা লর্ড মুুরগানের ছয়টি হাত ধারণ করে আছে। তিনি বৃক্ষের নিচে লর্ড মুুরুগানের একটি বড় ছবি স্থাপন করেছিলেন। খুব শীঘ্রই জায়গাটি ছোট মন্দির হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং গাছের চারপাশে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয় যা পরবর্তীকালে ‘পবিত্র বৃক্ষ’ বালাসূব্রামানিয়ার মন্দির নামে পরিচিত হয়।

বর্তমানে এই মন্দিরটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি এবং প্রতিদিন শত শত ভক্ত এখানে আসেন। মার্চ-এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ‘পাঙ্গুনি উথিরম'(Panguni Uthiram) বার্ষিক উৎসবের সময় মন্দিরটিতে বিপুল জনসাধারণের উপস্থিতি হয়।

০৯. Sri Vadapathira Kaliamman Temple

সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়ার কাছকাছি বেলস্টিয়ার ও সেরঙ্গুন সড়কের জংশনে অবস্থিত। জানা যায় ১৮৩০ সালের দিকে এই মন্দিরের কাছেই একটি বট গাছে একজন নারী মা কালীর ছবি রেখে পূজা করতেন। ধীরে ধীরে ওই স্থান অন্যদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৩৫ সালে স্থানটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্দির নির্মাণ করা হয়।

১০. Sree Maha Mariamman Temple

শ্রী মহা মারিয়াম্মান মন্দির এর ইতিহাস প্রায় ৮৫ বছর আগের, যখন সিম্বওয়ান রাবার এস্টেটে কিছু হিন্দু কর্মী, সিমেন্ট দিয়ে মূর্তির আকারে শ্রী মহামরিয়মকে উৎসর্গ করে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় মন্দিরটি মান্দাই সড়কে স্থানান্তরিত করা হয় এবং দেবীর সিমেন্ট মূর্তিটি গ্রানাইট মূর্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।

পবিত্র অভিষেক অনুষ্ঠানের সময় মন্দিরে মহাদেব শিব, শ্রী কৃষ্ণ, শ্রী বিনয়গর ও শ্রী মুুরুগানের প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে মন্দিরের স্থানটি শহুরে পুনর্বাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অধিগত হয় এবং তখনই মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটি ইশুনে বর্তমান শ্রী মহা মরিয়মমান মন্দিরের স্থায়ী আবাসস্থল খুঁজে পায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!